• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের সাতক্ষীরা

যেভাবে দোয়া করে বদ্ধ গুহা থেকে বেঁচে ফিরলেন তিন যুবক

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২৪  

নেক আমলকে স্মরণ করে তিন যুবক দোয়া করেছিলেন ও আল্লাহ তাআলার কাছে বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া কবুল করেন ও বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। হাদিস থেকে সেই ঘটনাটি তুলে ধরা হলো।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একবার তিন ব্যক্তি পথ ধরে হাঁটছিল। পথে তাদের উপর বৃষ্টি নামল। তখন তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিলে। তখন পাহাড় থেকে একটি পাথর খণ্ড এসে তাদের গুহার মুখে গড়িয়ে পড়ল। ফলে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল।

তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগল, নিজ নিজ নেক আমলের প্রতি লক্ষ্য কর, যা তোমরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করেছ এবং সেই নেক আমলের ওয়াসিলা দিয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করতে থাক। আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দিবেন।

তখন তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ, আমার পিতামাতা ছিলেন অতিশয় বৃদ্ধ। আমার একজন স্ত্রী ও ছোট ছোট সন্তানাদি ছিল। আমি তাদের জীবিকার জন্য বকরি মাঠে চরাতাম। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে এসে আমি সেগুলোর দুধ দোহন করতাম এবং আমি আমার পুত্র কন্যাদের আগে প্রথমেই আমার পিতামাতাকে দুধ পান করাতাম।

একদিন একটি গাছ আমাকে দূরে নিয়ে গেল (অর্থাৎ চারণভূমি দুরে ছিল)। এতে আমার ফিরতে রাত হয়ে গেল। আমি তাদের পিতামাতা উভয়কে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলাম। এরপর আমি পূর্বের মতই দুধ দোহন করলাম। আমি দুধ নিয়ে আমার পিতামাতার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম এবং তাদের নিদ্রা ভঙ্গ করা পছন্দ করলাম না এবং তাদের আগে সন্তানদের দুধ পান করানোও পছন্দ করলাম না।

তখন আমার সন্তানরা পিপাসায় আমার দুই পায়ের কাছে কাতরাচ্ছিল। তাদের ও আমার এই অবস্থা চলল। অবশেষে ভোর হয়ে গেল। যদি আপনি জানেন যে, আমি এই কাজ আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি, তাহলে আমাদের জন্য এতে পাথরে একটা ফাঁকা করে দিন, যার দ্বারা আমরা আসমান দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তাআলা তাতে একটু ফাঁকা করে দিলেন। তা দিয়ে তারা আসমান দেখতে পেলো।

আরেক জন বলল, হে আল্লাহ! আমার ঘটনা এই, আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষ যেভাবে নারীকে প্রচণ্ডরূপে ভালোবাসে আমি তাকে তেমন ভালোবাসতাম। আমি তাকে একান্ত কাছে পেতে চাইলাম। সে তাতে অস্বীকৃতি জানাল। তবে একশ দিনারের বিনিময়ে রাজি হলো। আমি চেষ্টা করে একশ দিনার সঞ্চয় করলাম। এরপর সেগুলো নিয়ে তার কাছে গেলাম।

যখন আমি তার দুই পায়ের মাঝখানে বসলাম, তখন সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা, আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে কুমারীত্ব নষ্ট করো না। এ কথা শুনে আমি তার উপর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আপনি যদি জানেন যে, একমাত্র আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি এ কাজ করেছি তাহলে আমাদের জন্য একটু ফাঁকা করে দিন। তখন তিনি তাদের জন্য গুহামুখ আরেকটু ফাঁকা করে দিলেন।

অপর ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ, আমি এক ফারাক চালের (শস্যের) একজন মজুর নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ সমাধা করে তার প্রাপ্য মজুরি দাবি করল। আমি এক ফারাক (শস্য) তার সামনে পেশ করলাম। কিন্তু সে তা নিল না। আমি সে শস্য জমিনে চাষ করতে থাকলাম। পরিশেষে তা দিয়ে গরু-বকরি ও রাখাল সংগ্রহ করলাম। পরে সে আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর। আর আমার প্রাপ্য পরিশোধের ব্যাপারে আমার উপর জুলুম করো না।

আমি বললাম, তুমি এই গরু ও রাখালের কাছে গিয়ে সেগুলো নিয়ে যাও। তখন সে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা করো না। আমি বললাম আমি তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করছি না। ওই গরু ও তার রাখালদের নিয়ে যাও। তখন সে তা নিয়ে চলে গেল। যদি আপনি জানেন যে, আমি এ কাজটি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি তাহলে অবশিষ্ট অংশ খুলে দিন। তখন আল্লাহ তাআলা গুহা মুখের অবশিষ্ট অংশ খুলে দিলেন। (মুসলিম ৬৬৯৮