• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের সাতক্ষীরা

প্রতারণা করলে ঈমান থাকে?

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২৪  

মানুষকে ধোঁকা দেয়া। কাউকে কোনো কিছুর ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওয়াদা ভেঙে ফেলা। কথার বরখেলাফ করা। এসব কিছুই প্রতারণা। মোট কথা, কথায় কাজে আচরণের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা। এ জাতীয় মন্দ গুণাবলি এখন আমাদের ভেতর বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।

আমরা দিন দিন মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলছি। কথায় কাজে আচরণে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছি। কেনাবেচার ক্ষেত্রে ওজনে কম দিচ্ছি। ভেজাল পণ্য দিয়ে গ্রাহককে ধোঁকা দিচ্ছি। পণ্যের দাম বাড়িয়ে ধোঁকা দিচ্ছি। 

একটি দেখিয়ে আরেকটি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করছি। অনলাইনে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। গ্রাহকের সরলতা বা দুর্বলতাকে পুঁজি করে তাকে ধোঁকা দিচ্ছি। প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছি।

একটিবারও কী আমরা ভেবে দেখেছি যে, এভাবে আমরা আমাদের ঈমান আমল নষ্ট করছি না তো?

হাদিসের আলোকে, প্রকৃত মুসলমান তো ঐ ব্যক্তি। যার হাত ও মুখের যাবতীয় অন্যায় আচরণ থেকে কোনো মুসলমান নিরাপদ থাকে। কিন্তু আমরা কজন বলতে পারব যে, আমাদের হাত ও মুখের আচরণ দ্বারা আমরা কারও কোনো ক্ষতি করছি না? কাউকে প্রতারিত করছি না? 

কাউকে কোনো কথা দিয়ে, তাকে দেয়া কথা বা প্রতিশ্রুতির উলটো আচরণ করা হচ্ছে। এমনটা কি আমরা করছি না? আর এভাবে প্রকৃত অর্থে আমরা কি আমাদের নিজেদের সঙ্গেই ধোঁকাবাজি করছি না তো? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

"তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের ছাড়া আর কারও সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে না। আর তারা এ বিষয়টি অনুভবও করতে পারে না। (সুরা বাকারা : ০৯)"

সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দিবে সেও আমাদের (মুসলমানদের) দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ মুসলিম : ১৮৪)

এ হাদিসে পরিষ্কার বলা হচ্ছে, যে ব্যক্তি কারও বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে, অর্থাৎ খুনোখুনি, হানাহানি মারামারি, যুদ্ধবিগ্রহ, বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির কাজ করবে; সে কখনও মুসলমানদের মধ্যে গণ্য হবে না। একইভাবে যারা মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রতারিত করে, ধোঁকা দেয়; বিভিন্ন মিথ্যা-ছলচাতুরী করে মানুষের হক নষ্ট করে; এরাও মুসলমানদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না। এর অর্থ হলো, এমন লোকেরা কখনও পরিপূর্ণ ইসলামের অনুসারী মুসলমান হতে পারে না।

আল্লাহ তা’আলা কোরআনে বলেন, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করো। (সুরা বাকারা : ২০৮)

ধোঁকাবাজদের মূল অস্ত্র হলো, মিথ্যা। তারা সাধারণত এর মাধ্যমেই মানুষকে প্রতারিত করে। মানুষের হক নষ্ট করে। আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এদের ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

মহানবী (সা.) বলেছেন,

"যার মধ্যে চারটি স্বভাব আছে, সে প্রকৃত মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ চারটি থেকে কোনো একটি স্বভাব আছে, সেটি ত্যাগ করা পর্যন্ত তার মধ্যে কপটতার একটি স্বভাব বিদ্যমান। ওই চার স্বভাব হলো, যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন সে তা খেয়ানত করে; যখন সে মিথ্যা বলে; যখন সে অঙ্গীকার করে, প্রতারণা করে, আর যখন সে বিবাদে জড়ায়, গালাগাল করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪, মুসলিম, হাদিস : ৫৮)"

অতএব আমাদেরকে সঠিকভাবে পরিপূর্ণ ইসলামের ধর্মীয় বিধান মেনে চলতে হবে। এমন যেন না হয়, আমরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলাম, রমজানে রোজা রাখলাম, হজ করলাম এবং যাকাতও আদায় করলাম। কিন্তু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি করা বন্ধ করতে পারলাম না। এভাবে ছলচাতুরী করে হক নষ্ট করলাম। তবে তো কেমন যেন আমাদের যাবতীয় ইবাদত ও আমলই আমরা বরবাদ করে দিলাম।

 

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে যাবতীয় অনিষ্টকারী বিষয় থেকে হেফাজত করুন। আমাদের দ্বারাও যেন এমন কোনো আচরণ প্রকাশ না পায়, যা সম্পূর্ণ প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সহায় হন। মুসলমানদের সাথে যেন আমরা উত্তম আচরণ করতে পারি। তিনি আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।