• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থীর আ*ত্ম*হ*ত্যা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২৪  

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. অপরাজিতা আঁখি আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে চারটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ডা. অপরাজিতা আঁখির ব্যাচমেট ও সাতক্ষীরা মেডিকেলের সাবেক একাধিক শিক্ষার্থী শনিবার (১৩ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ডা. অপরাজিতা আঁখি সাতক্ষীরা মেডিকেল থেকে ২০২২ সালে এমবিবিএস পাস করেন। এর পরের বছর ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেন ২০১৬-১৭ সেশনের এ শিক্ষার্থী। ডা. আঁখির গ্রামের বাড়ি অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায়। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের এমএস কোর্সে অধ্যয়নরত ডা. রাহুল দেব বিশ্বাসের স্ত্রী ছিলেন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডা. অপরাজিতা আঁখির এক ব্যাচমেট বলেন, ‘পারিবারিক নানা বিষয়ে হতাশায় ছিলেন ডা. অপরাজিতা আঁখি। ডা. অপরাজিতা আঁখি এমবিবিএসের শিক্ষার্থী থাকাকালীন মেডিকেল কলেজের মানসিকভাবে চাপে ছিলেন। মানসিক চাপ সইতে না পেরে রাতে ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা মেডিকেলের সাবেক শিক্ষার্থী ও ডা. অপরাজিতা আঁখির একজন সিনিয়র বলেন, ‘ডা. অপরাজিতা আঁখি শিক্ষার্থী থাকাকালীন সাতক্ষীরা মেডিকেলের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শংকর দেব বিশ্বাস নিজের ছেলের (ডা. রাহুল দেব বিশ্বাস) বউ বানানোর জন্য প্রস্তাব দেন এবং একপর্যায়ে অপরাজিতা আঁখিও রাজি হন। ক্লাসেও বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন। এরপর থেকে বিভিন্নভাবে ডা. অপরাজিতা আঁখিকে বিভিন্ন নজরদারিতে রাখতেন ডা. শংকর। এতে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে থাকতেন ডা. অপরাজিতা আঁখি। এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজছিলেন ডা. আখি। কিন্তু ডা. শংকর মেডিকেলের প্রভাবশালী শিক্ষক হওয়ায় তিনি এ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেননি। তাঁর ভয়ে মেডিকেলে কেউ কিছু বলতেও পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন ডা. অপরাজিতা আঁখির বাবা মারা যান, এরপর তাঁর একমাত্র ভাইও মারা যায়। বাবা-ভাই হারানোর শোক এবং শ্বশুর বাড়ি দুটি নিয়ে মানসিকভাবে চাপে থাকতেন ডা. অপরাজিতা আখি।’
সাতক্ষীরা মেডিকেলের সাবেক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাসে অপরাজিতা আঁখির সঙ্গে অধ্যাপক ডা. শংকর স্যারের ছেলের সঙ্গে ঘটা করে বিয়ে হয়। এরপর থেকে ‘শারীরিকভাবে শুকনা’-শ্বশুর বাড়ির লোকদের এই জাতীয় মানসিক নির্যাতনের মুখে পড়েন। ডা. অপরাজিতার শাশুড়ি তাঁকে বলতেন, তিনি তাঁর ছেলের যোগ্য নন এবং চিকন। এর একপর্যায়ে অপরাজিতা আঁখি তাঁর গ্রামের বাড়িতে চলে যান। গ্রামে যাওয়ার পর শ্বশুর বাড়ি থেকে সম্প্রতি ডিভোর্স লেটার পাঠানো হয় ডা. অপরাজিতা আঁখির বাসায়। ডিভোর্স লেটার গতকাল হাতে পান ডা. অপরাজিতা আঁখি। এতে আরও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডা. অপরাজিতা আঁখি মেডিকেলের নম্র ও ভদ্র ছেলেমেয়েদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। পরিবার ও তাঁর আশা ছিল, দেশের মানুষের সেবা করবেন। এখন আর তা হলো না। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে পরপারে চলে গেলেন ডা. অপরাজিতা আঁখি। এ যেন প্রদীপের আলো নিভে যাওয়ার মতো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আলিমুর রাজিব বলেন, ‘ডা. সোহানা আজমিন বিষয়টি দেখেছেন। তিনি আমাকে যেটি বলেছেন, সেটি হলো, পেটে ব্যথা নিয়ে ডা. অপরাজিতা আঁখি নিয়ে আসা হয়েছে। পরে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। রেফার করারও সুযোগ ছিল না। এরপর তিনি মারা যান। এ সময় তাঁর স্বজন এবং শ্বশুর ছিলেন। কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। পেটে কি হয়েছিল সেটি জানা যায়নি।’
দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. সোহানা আজমিন বলেন, ‘বমি, পাতলা পায়খানা আর প্রচণ্ড পেটে ব্যথা-এসব নিয়ে ডা. অপরাজিতা আখি এসেছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে পেটে ব্যথা আরও অনেক বেড়ে যায়। রাত আড়াইটার দিকে তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল। চারটার দিকে তাঁকে নতুন ওষুধ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরও পাওয়ারের ওষুধ দেওয়া হয়। সাড়ে চারটার দিকে মারা যান তিনি। অন্য কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা, আমরা সেটা বুঝতে পারিনি। আমি দেড় ঘণ্টা তাঁকে পেয়েছিল, তিনি যা বলেছে, তাই চিকিৎসা হয়েছে। হয়তোবা আগে কোনো অসুবিধা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণত পেটে ব্যথায় দুই ঘণ্টায় রোগী মারা যায় না। এক্ষেত্রে কোনো একটা কারণ থাকতে পারে। তাঁরা নিজ থেকে না বললে আমি বলতে পারবো না। তিনি কিছু খেয়েও আসতে পারেন। সাধারণত এই আলামত নিয়ে দুই ঘণ্টায় রোগী মারা যাওয়ার কথা না, এটা সন্দেহজনক। আগে থেকে কিছু একটা ছিল। যেটা ওরা আমাকে ক্লিয়ার করেনি। তাঁদের পরিবারে কিছু একটা হয়েছে। বাকিটুকু পুলিশ দেখতে পারে, যদি তারা পুলিশকে জানায়।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকেলের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শংকর দেব বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বিষয়ে আনা এমন তথ্য বা অভিযোগ আমি কখনও পাইনি। ডা. অপরাজিতা আঁখির কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। আমি তাঁর শেষ কৃত্যানুষ্ঠানে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেই আছি, তারাও কোনো অভিযোগ করেনি। আমি পরে বিস্তারিত বলবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মে মাস থেকে অপরাজিতা তাঁর মায়ের কাছে ছিল, আত্মহত্যার কথা শুনেননি।’
জানতে চাইলে মেডিকেলের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা এখনও নিশ্চিত না, ঘটনা কি হয়েছে। তিনি তাঁর বাসায় ছিলেন। বডি অভয়নগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি এখনও নিশ্চিত না। তাঁর শ্বশুর আমাকে ভোর ছয়টার দিকে জানিয়েছে। আত্মহত্যা নাকি অসুস্থ হয়ে মারা গেছে আমরা বলতে পারছি না।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে অভয়নগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আকিকুল ইসলামের কাছে ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।