শত শত তরুণীকে ফাঁদে ফেলে যৌন ব্যবসা, ৭ বছরে আয় শতকোটি টাকা

দীর্ঘদিন ধরে অতিকৌশলে শতশত তরুণীকে ফাঁদে ফেলে আধুনিক যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করছিল তারা। তাদের কাছ থেকে যেমন টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো, তেমনি তাদের ভিডিও টেলিগ্রাম গ্রুপে শেয়ার করা হতো। সেখানে থাকা লাখ লাখ দেশি-বিদেশি সাবস্ক্রাইবারদের কাছ থেকেও নেওয়া হতো টাকা। এভাবে চক্রটি গত সাত বছরে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। বলছি-পড়াশুনার পাশাপাশি ভয়ংকর যৌন ব্যবসার চক্রে জড়িয়ে যাওয়া আট শিক্ষার্থীর কথা। আর এই চক্রটির সদস্যদের মধ্য তালা উপজেলার দুই শিক্ষার্থী সুজন ও তানভীর জড়িত রয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাজধানী ঢাকা, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর চক্রটিকে শনাক্ত করে প্রধানসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার।
এসব অসামাজিক কাজের নেতৃত্বে ছিলেন দুই বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান (২৫) ও তার খালাতো ভাই তালার শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬)। তাদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও তরুণীদের ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, ১টি ল্যাপটপ এবং আয়ের টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-চক্রের প্রধান ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান (২৫) ও তার প্রধান সহযোগী খালাতো ভাই ও কল্যাণপুর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তালার নাংলা গ্রামের (বর্তমান তালা বাজারের বাসিন্দা) শেখ নাসিরের ছেলে শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬), মো. জাহিদ হাসান কাঁকন (২৮), তালার চরগ্রামের (বর্তমান তালা বাজারের বাসিন্দা) পিএম গোলাম মোস্তফার ছেলে তেজাগাঁ কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত (২৬), সৈয়দ হাসিবুর রহমান (২৭), শাদাত আল মুইজ (২৯), সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি (২৭) ও নায়না ইসলাম (২৪)।
সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশ-বিদেশে চক্রটির রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। নানা নামে তাদের শতাধিক চ্যানেলে গ্রাহক সংখ্যা কয়েক লাখ। বিভিন্ন বয়সী নারীদের ভিডিও কল ও দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে এবং গোপনে ধারণ করা সেসব ভিডিও বিক্রি করে চক্রটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। অর্থ লেনদেনের জন্য তারা ব্যবহার করতো এমএফএস বা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস। এছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাদের হাজার হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চক্রটি মূলত উঠতি বয়সী তরুণীসহ যেসব তরুণীরা পারিবারিক ভাঙনের শিকার ও আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিংয়ের নামে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো। আগ্রহীরা যোগাযোগ করলে কৌশলে তোলা হতো নগ্ন ছবি। প্রাথমিকভাবে কাজে আগ্রহী তরুণীদের চাহিদা মতো টাকা ও প্রয়োজন মেটাতো তারা। এরপর শুরু হতো ব্লাকমেইল। শুধু তাই নয়, নগ্ন ভিডিও কলেও যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা হতো। সেগুলোর ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে চালানো হচ্ছিল যৌন ব্যবসা। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে গোপনে ধারণ করা প্রায় ১০ লাখ নগ্ন ছবি ও ২০ হাজার অ্যাডাল্ট ভিডিও এর সন্ধান পাওয়া গেছে।
এই চক্রের প্রধান মেহেদী হাসান। তিনি টঙ্গীর ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তারই তার খালাতো ভাই তালার শেখ জাহিদ বিন সুজন মিলে এই চক্রটি গড়ে তুলেছিল তারা। তালার শেখ জাহিদ কল্যাণপুর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তারা চিকিৎসা বিদ্যার আড়ালে অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট তৈরি ও টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করতো। গ্রেপ্তার হওয়া চক্রের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।