• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের সাতক্ষীরা

যেসব কারণে ক্লান্তি কাজ করে

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৪  

সকাল থেকে রাত। কাজ আর কাজ। শরীরচর্চা করা হয় কম। ক্লান্তি কাটাতে চা বা কফি পান- তারপরও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।

একঘেয়ে জীবনে ক্লান্তি ভর করা নতুন কিছু নয়।

“এটাই বাস্তবতা”- হেল্থডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন ‘ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল’য়ের সমন্বিত স্বাস্থ্য কার্যক্রমের প্রাক্তন পরিচালক ডা. নাদা মেলোসভিচ।

তিনি বলেন, “জীবনযাত্রায় সাধারণ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ক্লান্তি ঝেরে ফেলা যায়।”

তবে কিছু শারীরিক সমস্যার দিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন মার্কিন এই চিকিৎসক।

অ্যালার্জির কারণে দুর্বল বোধ

‘অ্যালার্জি রাইনাইটিস’য়ের লক্ষণ হল নাক বন্ধ এবং চোখ চুলকানো। তবে আরেকটি লক্ষণ হল অবসাদ বোধ।

এই বিষয়ে ‘আমেরিকান কলেজ অফ অ্যালার্জি, অ্যাসমা অ্যান্ড ইমিউনোলাজি’র মুখপাত্র ডা. নিতা ওগডেন বলেন, “বেশিরভাগ সময় নিঃশ্বাস নেওয়াতে সমস্যা হলে দুর্বলতা কাজ করবেই।”

আর এই কারণে রাতের ঘুমও ভালো হয় না।

এই ক্ষেত্রে অ্যালার্জির ওষুধ না খেয়ে, নাকে টানার স্প্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি। এগুলো নাকবন্ধভাব দূর করে শ্বাস স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।

এছাড়া ধুলাবালি জনিত বা ঋতু ভিত্তিক অ্যালার্জি দূরে রাখতে ‘ননসিডেটিং অ্যান্টিহিস্টামিন’ বা ঝিমানো-ভাব তৈরি করে না এমন ওষুধ গ্রহণের পরামর্শ দেন।

সারারাত ঘুমানোর পরও দিনে ক্লান্তি লাগতে পারে

সাত-আট ঘণ্টা ঘুমানোর পরও যদি সকালে ক্লান্তি কাজ করে তবে ধরে নিতে হবে রাতের ঘুমটা ঠিকমতো গভীর হচ্ছে না। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

সাধারণ ঘুমের সমস্যার মধ্যে রয়েছে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। এই সমস্যায় ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস নেওয়া থেমে আবার শুরু হয়। আবার থামে। এভাবে চলতে থাকে।

‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’র ঘুম-বিষয়ক চিকিৎসক রাজ গুপ্তা একই প্রতিবেদনে বলেন, “এই ধরনের শারীরিক অসুবিধা ঘরেই পরীক্ষার মাধ্যমে বের করা সম্ভব।”

সকালে ক্লান্তি কাজ করা, নাক ডাকা ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র সাধারণ লক্ষণ। এরকম হতে থাকলে বিশেষজ্ঞের ডাক্তারের সাথে পরামর্শে চললে ঘুমের উন্নতি হবে। ফলে দিনে ক্লান্তি বোধ কমবে।

ব্যায়াম কর্মচঞ্চলতা বাড়ায়

“শরীরচর্চা অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসরণ বাড়ায়”- বলেন ‘আমেরিকান কাউন্সিল অন এক্সারসাইজ’য়ের জ্যেষ্ঠ পরিচালক সাবরিনা জো।

এই হরমোন আসলে পেশিতে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বাড়িয়ে অবসাদ ও ব্যথার অনুভূতি এড়িয়ে যাওয়ার সংকেত দেয় শরীরকে।

ফলে ব্যায়ামের পর ক্লান্তি বোধ হলেও পরে দেহে শক্তির অনুভূতি তৈরি করে। এই কারণে দৈনিক শরীরচর্চার অভ্যাস গড়তে হবে।

ভিটামিন ডি’র স্বল্পতা

ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে হাড়ের স্বাস্থ্য মজবুত রাখতে কাজ করে ভিটামিন ডি। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’ জানাচ্ছে সূর্যের সংস্পর্শে গেলে ত্বক ভিটামিন ডি প্রস্তুত করে। এছাড়া এই ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেয়েও দেহে এর মাত্রা ঠিক রাখা যায়।

যদিও ভিটামিন ডি’র অভাবের কোনো লক্ষণ সহজে চোখে পড়ে না। তবে ‘নিউট্রিয়েন্টস’ সাময়িকীতে ২০১৯ সালে প্রকাশিত ইতালির ‘ইউনিভার্সিটি অফ কেটেনিয়া’র গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, অবসাদ বোধ করা ভিটামিন ডি’র অপর্যাপ্ততার লক্ষণ হতে পারে।

চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম এবং ‘ফোর্টিফায়েড মিল্ক’ গ্রহণের মাধ্যমে ভিটামিন ডি’র চাহিদা পূরণ করা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যখন শক্তি ক্ষয়ের কারণ

ফেইসবুক বা ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও দেহে ক্লান্তি তৈরি করতে পারে।

এই বিষয়ে ‘ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গ স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ব্রায়ান প্রাইম্যাক বলেন, “অন্যের সামাজিক মাধ্যমে অতিরঞ্জিত বা সাজানো গোছানো ছবি দেখে মনে হতে পারে নিজের জীবনটা এত নিখুঁত না। এই নেতিবাচক চিন্তা মনের ওপর বাজে প্রভাব ফেলে।”

‘আমেরিকান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত এই চিকিৎসকের করা গবেষণায় দেখা গেছে, একাকী বোধ করার সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে মানসিক অবসাদের তৈরি করতে পারে।

ড. প্রাইম্যাক পরামর্শ দেন, “কারও জীবন নিখুঁত নয়। অন্যের ছবি ভিডিও দেখে আফসোস করা বাদ দিয়ে, আশপাশে যারা আসল বন্ধু আছে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুক্ত হয়ে থাকলে বরং ভুল ধারনা ভাঙবে।

শক্তি পুনরুদ্ধারে বিরতি নেওয়া

কর্মব্যস্তময় এই সময়ে বিরতি নেওয়ার বিষয়টা অস্বাভাবিক লাগলেও কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নিলে শক্তি ফিরে পেতে কাজ করে। তবে ‘ব্রেক’ নিতে গিয়ে ইমেইল দেখা বা অনলাইন শপ’য়ে ঢুঁ দেওয়া যাবে না। এসব আরও শক্তির ক্ষয় করে।

এক্ষেত্রে ‍যুক্তরাষ্ট্রের চ্যাপল হিল’য়ে অবস্থিত ‘লার্নিং সেন্টার অ্যাট দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা’ সৃজনশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে- হতে পারে সেটা বাইরে কিছুক্ষণ হেঁটে আসা, সহকর্মীদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করা, কাজের ফাঁকে চা কফি পান কিংবা একটু সময় নিয়ে কোনো বন্ধুকে ফোন করে খোঁজ খবর নেওয়া।

জোর করে বিরতি নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যখন কাজের চাপ কম থাকবে তখন এই ধরনের বিষয়গুলো করা ভালো। এমনকি কাজ থেকে খানিকটা বিরতি নিলেও উপকার মিলবে।

এছাড়া ‘পাওয়ার ন্যাপ’ বা দুপুরে ছোট্ট ঘুম দেহের ক্লান্তি ঝরাতে ভালো কাজ করে।

অবসাদ যখন রোগের লক্ষণ

ওপরের কারণগুলো ছাড়াও ক্লান্তিভর করে থাকার মানে হতে পারে দেহের ভেতরে কোনো সমস্যা লুকিয়ে আছে।

ডা. নাদা মেলোসভিচ বলেন, “দেহে লৌহের ঘাটতি, যাকে বলে রক্তশূন্যতা বা ‘অ্যানিমিয়া’ এবং ‘সিলিয়াক’ রোগ বা দেহে গ্লুটেনের অসহিষ্ণুতা- এই দুটি অবস্থার কারণে দুর্বল বোধ হয়।”

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ডায়াবিটিজ অ্যান্ড ডায়জেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজ’ জানাচ্ছে- ‘হাইপোথাইরয়ডিজম’ বা থায়রয়েড গ্রন্থির সমস্যার কারণে পর্যাপ্ত হরমোন প্রস্তুত না হলেও দেহে অবসাদ কাজ করে।

এছাড়া ক্লান্তি ও অবসাদ বোধ করার অন্য কারণ হতে পারে হৃদরোগ। মানসিক চাপে থাকলেও দেহ ঠিকমতো সাড়া দেয় না।

তাই দুর্বল বোধ করার অন্য কোনো কারণ খুঁজে না পেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এসব রোগ আছে কিনা জেনে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।